মদিনায় রাসুলুল্লাহ সা. এর বিয়ে
বেশিরভাগ সিরাত গ্রন্থে রাসুলুল্লাহ সা. এর মদিনার জীবনে যুদ্ধের ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মূলত ইসলামের শুরু থেকেই সিরাতের চর্চা রাসুলুল্লাহ সা. এর গাযওয়া বেশি প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে কিতাবুল মাগাযি নামক অধ্যায়ে গাযওয়াসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মাগাযি বলে একসময় সিরাতকেই বুঝানো হত।
তাই মদিনার জীবনে রাসুলুল্লাহ সা. এর যুদ্ধ ছাড়া অন্যান্য ঘটনাবলীর বর্ণনা খুব কম এসেছে। এই পর্বে আমরা হিজরতের ৩য় ও ৪র্থ বছরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আলোচনা করব।
রাসুলুল্লাহ সা. এর বিয়ে
মদিনায় আসার পর রাসুলুল্লাহ সা. প্রথম বিয়ে করেন হাফসা সা. কে। তিনি ছিলেন হযরত ওমর রা. এর কন্যা। তার প্রথম স্বামী বদর যুদ্ধের কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেন। এরপর রাসুল সা. তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা আবু বকর রা. এর কাছে প্রকাশ করেছিলেন। আবু বকর রা. ও বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন।
ওমর রা. তখন চেষ্টা করছিলেন তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার। তিনি প্রথমে একজন সাহাবির কাছে প্রস্তাবও দেন। এরপর আবু বকর রা. কে প্রস্তাব দেন। তিনিও কোনো জবাব দেননি। এর কিছুদিন পর রাসুল সা. হাফসা রা. কে বিয়ে করেন।
হাফসা রা. ছিলেন বেশ মেধাবী। রাসুল সা. এর স্ত্রীদের মধ্যে যারা বেশি সংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। এই বিয়ে হয়েছিল তৃতীয় হিজরিতে।
এরপর চতুর্থ হিজরির রমযানে তথা উহুদের প্রায় একবছর পর রাসুলুল্লাহ সা. যয়নাব বিনতে খুযাইমা রা. কে বিয়ে করেন। তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন উম্মুল মাসাকিন তথা দরিদ্রদের মা হিসেবে। অর্থাৎ দরিদ্রদেরকে তিনি অনেক বেশি দান সদাকা করতেন।
যয়নাব বিনতে খুযাইমা রা. কে যখন রাসুলুল্লাহ সা. বিয়ে করেছিলেন তখন তিনি ছিলেন বেশ বয়স্ক একজন নারী। এর আগে তাঁর তিনটি বিয়ে হয়েছিল।
প্রথম বিয়ে হয়েছিল রাসুলুল্লাহ সা. এর চাচাত ভাই তুফাইল ইবনুল হারিসের সাথে। তিনি মারা যাবার পর তারই ভাই উবায়দা ইবনুল হারিস তাকে বিয়ে করেন। বদরের যুদ্ধে উবায়দা ইবনুল হারিস রা. শহীদ হয়েছিলেন। এরপর তার বিয়ে হয় আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রা. এর সাথে। তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন।
সেসময় কেউ যুদ্ধে শহীদ হলে তাদের বিধবা স্ত্রীদের অন্যরা বিয়ে করতেন। রাসুলুল্লাহ সা. তাই যয়নব বিনতে খুযাইমা রা. কে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি ছিলেন কুরাইশ গোত্রের একজন গুণবতী নারী। তবে রাসুলুল্লাহ সা. এর সাথে খুব বেশিদিন তার কাটানোর সুযগ হয়নি। দু-তিন মাস পরই তিনি ইন্তেকাল করেন।
একপি বছর রাসুলুল্লাহ সা. বিয়ে করেছিলেন উম্মু সালাম রা. কে। তিনিও ছিলেন কুরাইশ বংশের বেশ বুদ্ধিমতী একজন নারী। তার আগের স্বামী ছিলেন আবু সালামা রা.। উহুদ যুদ্ধে তিনি বেশ আহত হন এবং কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসুল সা. এর দুধভাই ছিলেন।
আবু সালামা রা. এর বেশ কজন ছোট ছোট সন্তান ছিল। উম্মু সালামা রা. তাই স্বামীর মৃত্যুতে খুব ভেঙে পড়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ সা. তাকে সান্ত্বনা দিয়ে একটি দুআ শিখিয়েছিলেন যার অর্থ, হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দান করুন এবং তার চেয়ে উত্তম দান করুন।
উম্মু সালামা রা. বলেন, আমি মনে মনে ভাবতাম, আবু সালাম রা. এর থেকে উত্তম আর কে হতে পারে আমার জন্য।
কিছুদিন পর যখন তার ইদ্দত শেষ হলো তখন রাসুল সা. উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর মাধ্যমে তাকে প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তখন রাসুলুল্লাহ সা. নিজে তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। তখন উম্মু সালাম রা. বলেন, আপনাকে বিয়ে করতে আগ্রহ না থাকার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আমার ভয় হয় যে আমার অভিমান বেশি। আমি এমন কিছু করে ফেলতে পারি যে কারণে আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন। আর আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমার বয়স হয়েছে।
তখন রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি যে অভিমানের কথা বললে তা আল্লাহ তোমার থেকে দূর করে দিবেন। আর বয়স তো আমারও হয়েছে। তোমার সন্তানরা এখন থেকে আমার সন্তান।
তখন উম্মু সালাম রা. রাসুলুল্লাহ সা. কে বিয়ে করতে সম্মতি দেন। তিনি বলেন, সত্যিই আল্লাহ আমাকে উত্তম সঙ্গী মিলিয়ে দিয়েছিলেন। তার এতিম সন্তানরা রাসুলুল্লাহ সা. এর বাড়িতে বড় হয়েছিলেন।
লেখক: নাজমুস সাকিব
প্রকাশের তারিখ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শেয়ার করুন :
Currently Reading
